প্যারেন্টিং বিষয়টা আসলেই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু দেশের বাইরে মা দের জন্য একা বাবুদের লালন পালন করা একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়।
কন্টিনিউয়াসলি একা যেসব মায়েরা এক বা একের অধিক বাচ্চাদের লালন পালন করেন তাদের ফিজিক্যাল হেলথের পাশাপাশি মেন্টাল হেলথও প্রায় দূর্বল হয়ে পড়ে। অনেকে বলতে পারেন যে বিদেশে ডে কেয়ার আছে, বাচ্চাদের দেখাশোনার ভালো সিকিউরিটি আছে। তা আছে কিন্তু আপনি যদি অভিভাবক হিসেবে এভাবে চিন্তা করেন যে বাচ্চাদের সাথে আপনার বন্ডিংটা স্ট্রং হোক ক্লোজ হোক এবং সেই সাথে অনেক কিছু বিষয় সম্পর্কে আপনি নিজে তাকে তরবিয়ত করতে চান ইনশাআল্লাহ তাহলে অনেকখানি পরিশ্রম আপনাকে করতে হবে।
আমি একজন প্রবাসী এবং আমার দুই বাচ্চার বয়স যথাক্রমে সাড়ে ৩ বছর এবং দেড় বছর আলহামদুলিল্লাহ। মা হবার এই যাত্রায় যতোটা অভিজ্ঞতা হয়েছে সেখান থেকে আসলে লিখছি কিন্তু আমি এখনও শিখে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।
আমি মনে করি বাচ্চাদের লালন পালনের পাশাপাশি মায়েদের আরামও অনেক জরুরি।
সেজন্য প্রথমে যেসব কাজের মাধ্যমে মায়েরা কিছুটা আরাম পেতে পারে সেগুলো লিখছি এবং বাচ্চাদের নিয়ে লিখছি ইনশাআল্লাহ
১/ নবজাতক বাচ্চাকে শুরু থেকে বেড/ ব্যাসিনেট/ বাউন্সার/ ক্রিবে রাখার অভ্যাস করে তোলা। প্রথমদিকে বাবুদের সেখানে শুইয়ে দিএ তারা কান্না করতে পারে সেজন্য সাথে সাথে কোলে নেয়া যাবে না, ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে বাবু সেই বিষয়টা নিজে গ্র্যাব করতে থাকবে এবং ঘুম পাড়িয়ে যদি রেখে দেন তাহলে ইনশাআল্লাহ বেশ সময় ধরে তারা সেখানে ঘুমিয়ে থাকবে।
২/ ব্রেস্ট ফিডিং এর পাশাপাশি ফর্মুলা ব্যবহার করা ব্যক্তিগত ভাবে আমি সাপোর্ট করি। দুইটার অনুপাত ৯০% এবং ১০% করে আমি ব্যবহার করেছি। কারন আমি বাইরে বাচ্চাদের সরাসরি ফিড করাতে পারি না আর পাম্পিং করলে আমার তেমন মিল্ক বেরও হয় না। সেজন্য বাইরে গেলে বাচ্চাদের ফর্মূলা দিতাম বাট বাসায় থাকলে ব্রেস্ট ফিডিং করাতাম আলহামদুলিল্লাহ।
৩/ ৬ মাসের পর থেকে অল্প অল্প করে বাইরের খাবার মানে সলিড বা সেমি সলিড দেয়া শুরু করবেন ইনশাআল্লাহ। যতোটুক খায় যা খায় আলহামদুলিল্লাহ। এমনও হতে পারে যে আপনি যা চাচ্ছেন সেটা খেতে চাচ্ছে জাস্ট আল্লাহর নাম নিয়ে দিয়ে দিবেন। আর বাবুদের আলাদাভাবে খাওয়াবেন না। আপনি বসবেন তাদেরকেও সাথে বসাবেন। তাদের সামনে আপনি আপনারটা খাবেন। শেয়ারিং করা ভালো কিন্তু বাচ্চারা খাবার শেয়ার টা আগে করতে চায়
সেক্ষেত্রে আপাতত ওই বিষয়ে শেয়ারিং শেখানোর দরকার নাই।
৪/ আরেকটু বড় হলে মানে ১বছর হচ্ছে তখন থেকে বাচ্চাদের সাথে বেশির ভাগ সময়ে টাইম স্পেন্ড করেছি। এমনও হয়েছে ওইদিন রান্না করি নি। ওদের নিয়েই থেকেছি। কথা বলা, খেলা করা অর্থাৎ ডিভাইস্মুখী যতোটা কম রাখা যায় সেই ব্যবস্থা করার ট্রাই করেছি। এখানে একটা কথা বলতে চাই সেটা হচ্ছে টিভি, ল্যাপটপ, ফোন সবগুলোই খারাপ তবে এদের মধ্যে বাচ্চাদের ফোনে ভিডিও বা গেমস দেখানো অনেক বেশি ক্ষতিকর। সেজন্য "মন্দের ভালো" হিসেবে smart LED TV দেখানো বেটার। এট লিস্ট এর কন্ট্রোল আপনার হাতে থাকছে আলহামদুলিল্লাহ।
৫/ বাইরের দেশে সব কাজ নিজেদেরই করতে হয় আপু। তাই বাবুদের নিয়ে প্রতিদিন ধরে বসে থাকা কঠিন। যেটা বললাম শুরুর দিকে বসতাম ঠিকই বাট একটু বুঝ হবার সাথে সাথে ওকে আস্তে আস্তে বুঝাই। মাঝে মধ্যে ওর হেল্প চাই। আলহামদুলিল্লাহ বুঝালে হেল্প ও পাবেন ইনশাআল্লাহ। এগুলো করা বলতে ওকে কিছু এক্টিভিটিস প্লাস ডিসিপ্লিনের মাঝে রাখার ট্রাই করা। বাচ্চাদের কাছ থেকে হেল্প চাইলে বা কোন কাজ করতে দিলে তারা অনেক খুশি হয়, স্বাচ্ছন্দে করতে চায় সেজন্য সেই আগ্রহকে ধরে রেখে তাদের সুযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করি।
৬/ বাচ্চাদের সাথে খাবারের সময়ে, ঘুমানোর সময়ে গল্প বলি। কুর'আন রিলেটেড, ম্যানারস রিলেটেড গল্প বেশির ভাগ সময়ে শোনাই। গল্প শোনার মাঝে রেখেছি ইনশাআল্লাহ আফেকটু বড় হলে গল্পের বই দেয়ার চিন্তা ভাবনা করেছি।
৭/ আবার খাবারের কথায় আসে। বাচ্চারা প্রথম দিকে অর্থাৎ জন্মের পর পর তাদের শরীর ফোলা থাকে, গুলুমুলু থাকে। তাদের হাড় ফাপা থাকে আর শরীরে পানি অনেক বেশি থাকে সেজন্য গুলু মুলু থাকে মাশা আল্লাহ। কিন্তু যখন ২ বছর অতিক্রম করে তখন তাদের bone development হতে থাকে, শরীর থেকে পানি কমতে থাকে। গুলুমুলু কমে যায়.. তারপর তা দেখে আপনার মন খারাপ হবে যে "বাচ্চা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে!!"
কিন্তু আসলে সেটা না.. ২ বছর এর পর বাচ্চারা খাবারের ব্যপারে picky হয়ে যায় কারন তারা স্বাদ সম্পর্কে জেনে যায় আলহামদুলিল্লাহ।
এসব কারনে খাবার নিয়ে জোর করা যাবে না। যতোটুক খাবে, যা যতোটুক চাবে দিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ। অফার করবেন বাট জোর করবেন না। খিদা যে লাগে তাদেরকে বুঝার সুযোগ দিতে হবে ইনশাআল্লাহ।
৮/ Toddler age টায় বাচ্চারা যেহেতু খাবার নিয়ে বেশ ঝামেলা করে, কম খায় সেজন্য তাদের একই খাবার দেয়া থেকে একটু সরে আসতে হবে। তিনবেলার রূটিনে খাবারগুলো একটু ঘুরিয়ে দিলে ভালো হয় ইনশাআল্লাহ।
৯/ বাচ্চাদের আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পটি ট্রেইনিং করানো। অনেক মায়েরা দেখা যায় বাচ্চাকে ৬/৭ মাসে পটি চেয়ারে বসিয়ে পি বা পটি করায় মাশা আল্লাহ। এই উদ্যোগ আসলে ভালো কিন্তু এটাকে "পটি ট্রেইনিং" বলা যাবে না। পটি ট্রেইনিং হচ্ছে বাচ্চা নিজে বুঝবে, পি/ পটির প্রেসার ফিল করে আপনাকে নিজ থেকে বলবে যে সে বাথরুম করবে। তখন ওই অবস্থাকে বলা হয় "পটি ট্রেইনিং"। এই সেন্স মূলত আসে বাচ্চার এভারেজ বয়স পৌনে ২ বছর বয়সে। সেজন্য বাচ্চার বয়স যখন প্রায় দেড় বছর তখন থেকে চাইলে তাকে অল্প অল্প করে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে পারেন এই পটি ট্রেইনিং এর জন্য ইনশাআল্লাহ। গল্প বলে, বইয়ে কার্টুন দেখিয়ে, নিজের সাথে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে... এভাবে করে তাদের বুঝাতে পারেন ইনশাআল্লাহ।
১০/ বাচ্চার সামনে নিজেকে নমনীয় রাখা। এটা খুবই জরুরি। অনেক সময় আমরা বাচ্চা পালতে গিয়ে অনেক একঘেয়েমি অনুভব করে ফেলি,ক্লান্ত ফিল করি, সেজন্য মেজাজ চড়া হয়ে যায়, সবর থাকে না। রেগে গিয়ে বাচ্চাদের বকা দিয়ে ফেলি, মারি।
বাচ্চাদের অবশ্যই এগুলো করা একবারে উচিত না। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত, মায়েরাও মানুষ, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাজগুলো করে না করতে চায় না। এখন যদি এরকম কিছু হয়ে যায় তাহলে বাচ্চদের কাছে তারা যেন ক্ষমা চেয়ে নেয়। সরি বলে বাচ্চাকে। এতে বাচ্চারাও নিজেদের দুষ্টামির বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারে আলহামদুলিল্লাহ।
একটা বাচ্চাকে " ভালো মানুষ" হিসেবে গড়ে তোলা আসলে অনেক কঠিন কাজ। কারন আমরা নিজেরাই কতোটা ভালো সে সম্পর্কেই জানা থাকে না। আবার বাচ্চাকে ভালো তরবিয়ত দেয়াটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ। সেজন্য প্রতিনিয়ত দু'আ করে যেতে হবে নামায কালামের পাশপাশি। আল্লাহ যেন প্রত্যেক মায়েদের পরিস্থিতি সহজ করে দেন, তাদের সবর দান করেন ইনশাআল্লাহ আমিন এই দু'আ করি। ❤️